সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিটে) যেসব আলামত আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার মধ্যে বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ জমা দেওয়া হয়নি। সেইসঙ্গে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সময় প্রথমে মোবাইলফোনে ধারণ করা যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, সেই ভিডিও সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। মিন্নির পরিবার ও আইনজীবীদের অভিযোগ, মিন্নিকে ফাঁসানোর জন্যই এই ফুটেজটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, মামলার প্রয়োজনে যেসব বিষয় উপস্থাপন করা দরকার তার সবকিছুই আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগপত্রে (চার্জশিটে) হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও জব্দ মালামালসহ ১৮টি আলামতের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘পুলিশ নিজেদের খেয়াল খুশি মতো চার্জশিট তৈরি করেছে। আমার মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য কলেজ গেটের সিসিটিভি ফুটেজ আলামত হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও হাসপাতালের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে দেওয়া হয়নি। দেশবাসী দেখেছে, আমার মেয়ে তার স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু, পুলিশ সে বিষয়ে চার্জশিটে কিছুই উল্লেখ করেনি। আমি পুলিশের কাছে জানতে চাই, কাদেরকে বাঁচাতে কত টাকার বিনিময়ে এই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘পুলিশ যে চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে, তার সঙ্গে এজাহারের যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। সেইসঙ্গে মিন্নিকে ফাঁসানোর জন্য আদালতের কাছে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়নি। মিন্নিকে সম্পূর্ণ ভিলেন রুপে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবে মিন্নি তার স্বামী নিহত রিফাত শরীফকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, যা দেশবাসী দেখেছে। আমি মনে করি মিন্নি নির্দোষ। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা তাকে মুক্ত করবো।’
মামলার তদন্তকারী ও বরগুনা সদর থানার পরির্দশক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিন্নি রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, সেটা আমরা সবাই জানি। এটা গোপন কিছু না। আমরা রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে তদন্ত করে আদালতের কাছে আলামত উপস্থাপন করেছি। এখানে কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসানোর কোনও চেষ্টা করা হয়নি।’
১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয় কিশোর অপরাধী শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। এছাড়াও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ জামিনে রয়েছেন ২ জন।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
Leave a Reply